Header Ads

Header ADS

উৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলা ভাষার শব্দের উদাহরণসহ শ্রেনীবিন্যাস আলোচনা।


শব্দের উৎপত্তি
শব্দের উৎপত্তি থেকে বিসিএস প্রিলিমিনারিতে বিগত বছরে প্রশ্ন এসেছে। বাংলা ব্যাকরন থেকে বিসিএস প্রিলিমিনারিতে সর্বোচ্চ ১৫ নম্বর থাকবে । অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও শব্দের উৎপত্তি থেকে প্রশ্ন আসতে পারে
উৎপত্তিগত দিক থেকে শব্দের উদাহরণসহ শ্রেনীবিন্যাস আলোচনা :
 হাজার বছরের ভাষা বাংলা। বিবর্তনের নানা পর্যায় অতিক্রম করে এ ভাষা আজকের রূপে বিকাশলাভ করেছে। এ ভাষা বিকাশ ও বিবর্তনের ধারায় এসে মিশেছে বিভিন্ন ভাষায় শব্দাবলি। কালের বিবর্তনে সে সব শব্দ আজ বাংলা ভাষার নিজের হয়ে গেছে। তবে ব্যূৎপত্তি বিশ্লেষণে সে সব শব্দকে তার মূল পরিচয়েই চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। সে বিবেচনায়
 উৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলা ভাষার শব্দ সমূহকে ৫ (পাঁচ) শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।
যথা:
1. তৎসম শব্দ
2. অর্ধতৎসম শব্দ
3. তদ্ভব শব্দ
4. দেশি শব্দ
5. বিদেশি শব্দ
1. তৎসম শব্দ : ‘তৎ’ অর্থ তার এবং ‘সম’ অর্থ মত অর্থাৎ তার মত। তবে তৎসম শব্দটি ‘সংস্কৃত ভাষার শব্দের মত’ অর্থে ব্যবহৃত। সুতরাং, সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ বাংলা ভাষায় অবিকলভাবে ব্যবহৃত হয়, সে সব শব্দই তৎসম শব্দ।
 যেমন: গৃহ, সূর্য, বৃক্ষ, হস্ত, মহোৎসব, চন্দ্র, রাত্রি, নিমন্ত্রণ প্রভৃতি।
2. অর্ধতৎসম শব্দ : সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ প্রধানত উচ্চারণ বিকৃতির কারণে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় প্রচলিত, সে সব শব্দকে অর্ধতৎসম শব্দ বলে। যেমন: মোচ্ছব, গেহ, সুরুজ, পরান, পেন্নাম, নেমন্তন্ন, জোছনা, পুব প্রভৃতি।
এখানে ‘মোচ্ছব’ শব্দটি ‘মহোৎসব’, ‘গেহ’ ‘গৃহ’, ‘সুরুজ’ শব্দটি ‘সূর্য’, ‘পরান’ শব্দটি ‘প্রাণ’, ‘পেন্নাম’ শব্দটি ‘প্রনাম’, ‘নেমন্তন্ন’ শব্দটি ‘নিমন্ত্রণ’, ‘জোছনা’ শব্দটি ‘জ্যোৎস্না’ এবং ‘পুর্ব’ শব্দটি ‘পূর্ব’ সংস্কৃত শব্দ থেকে উচ্চারণ বিকৃত হয়ে বাংলায় প্রচলিত।
3. তদ্ভব শব্দ : সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ প্রাকৃত পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে প্রধানত উচ্চারণ বিকৃত হয়ে বাংলায় এসেছে, সে গুলোকে তদ্ভব শব্দ বলা হয়। যেমন: তৎসম প্রাকৃত বাংলা হস্ত হত্থ হাত কার্য্য কজ্জ কাজ বধূ বহু বউ পাদ পাঅ পা
তদ্ভব শব্দ প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার আদি স্তর বৈদিক ও সংস্কৃত ভাষার বিবর্তিত রূপ। এ সব শব্দই বাংলা ভাষা উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেছে এবং এ সব শব্দই বাংলা ভাষার মূল বা নিজ শব্দ হিসেবে বিবেচিত। বাংলা তদ্ভব শব্দের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। ড. এনামুল হক মনে করেন যে, বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শতকরা ৬০ ভাগ শব্দ তদ্ভব শব্দ যা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত।

কিছু তদ্ভব শব্দের তালিকা নিচে দেওয়া হল:
চোখ, কান, মা, বাপ, ভাই, বোন, মামা, জেঠা, গরু, গোয়ালা, ঘোড়া, উট, কামার, কুমার, হাতি, গাধা, সাপ, আম, ছাতা, সোনা, রূপা, তামা, বাতি, লাঠি, এক, দুই, তিন, পোয়া, সাড়ে, দেগ, আধ, পাঁচই, কাল, আজ, মৌ, হালকা, পাতলা, তুমি, তিনি, নাচ, ভাল প্রভৃতি।
4. দেশি শব্দ : স্থানীয় আদিগোষ্ঠীর অর্থাৎ অনার্য ভাষার (দ্রাবিড়, কোল, ভীম, সাঁওতাল প্রভৃতি জাতি) যে সব শব্দ বাংলায় ব্যবহৃত হয়, সে সব শব্দকে দেশি শব্দ বলা হয়। যেমন: ঢেঁকি, কুলা, ঝাড়, কয়লা, ঝিঙা, টং, গাড়ি, ছাই ডাসা প্রভৃতি।
5. বিদেশী শব্দ:  বাংলা ভাষা মিশ্রভাষা। এই ভাষায় রয়েছে বিভিন্ন বিদেশী ভাষার শব্দ। এসব বিদেশী শব্দের দ্বারা বাংলাভাষার ভান্ডার আজ সমৃদ্ধ। এগুলোর পরিচয় নিম্নে দেওয়া হলোঃ
 ফারসি ভাষা থেকে আগত গুরুত্বপূর্ণ কিছু শব্দঃ আন্দাজ, আওয়াজ, আফসোস, আবহাওয়া, অজুহাত, আবাদ, আমদানি, আমেজ, আয়না, আরাম, আসমান, আস্তানা, আশকারা, ইয়ার, ওস্তাদ, কামাই, কারখানা, কারবার, কারিগর, কিনারা, কিশমিশ, কুস্তি, কোমর, খরচ, খঞ্জর, খরগোশ, খুব, কম, বেশি, জোড়, তোপ, চশমা, মোকদ্দমা, মালিক, সিপাহী, খোদা, দরিয়া, খাতা, গোলাপ, রোজ, গোয়েন্দা, চাকরি, চাঁদা, চাকর, চালাক, চেহারা, জবাব, দরজা, তীর (বাণ), তৈয়ার, দারোয়ান, বস্তা, বাজি, মজুর, ময়দা, মোরগ, মাহিনা, মিহি, মেথর, রপ্তানি, রাস্তা, রুমাল, রেশম, লাশ, শহর, শায়েস্তা, শিরনামা, সওদা, সবজি, সবুজ, সরকার, সর্দি, সাজা, সাদা, সানাই, সে (তিন), হপ্তা, হাজার, হিন্দু, হাঙ্গামা ইত্যাদি।
তুর্কি ভাষার শব্দঃ আলখাল্লা, বাবা, বাবুর্চি, খান, বাহাদুর, বোচকা, উর্দু, কাঁচি, কাবু, কুলি, তোপ, দারোগা, ইত্যাদি।
আরবি থেকে আগত শব্দ : অছিলা, অজুহাত, অন্দও, আকবর, আক্কেল, আখের, আজব, আতর, আদত, আদব-কায়দা, আদালত, আবির, আমল, আমলা, আমানত, আমিন, আমির, ওমরা, আয়েশ, আরক, আরশ, আলখেল্লা, আলবৎ, আলাদা, আলোয়ান, আসবাব, আসল, আসামী, আহাম্মক, ইজারা, ইজ্জত, ঈদ, ইনকিলাব, ইনাম, ইন্তিকাল, ইমারাত, ইশতেহার, ইশারা, ইসলাম, ইস্তফা, ইহুদি, উকিল, উজির, উসুল, এক্তিয়ার, এজমালি, এজলাস, এজাহার, এলাকা, ওকালত, ওজন, ওয়াসিল, ওয়াস্তে, ওয়ারিশ, কদম, কদর, কবর, কেবলা, কবুল, কয়েদ, করার, কলপ, কলাই, কসবা, কসাই, কসুর, কাওয়াল, কানাত, কাফন, কাফরী, কাফের, কামাল, কাজিম, কায়দা, কায়েম, কালিয়া, কাহিল, কিস্তি, কুদরত, কুমকুম, কুলুপ, কেচ্ছা, কেতাব, কেরামতি, কেল্লাফতে, কৈফিয়ৎ, ক্রোক, খতম, খতিয়ান, খবর, খয়রাত, খরিফ, খসড়া, খাজনা, খাতির, খাদিম, খাপ, খামচা, খারাপ, খারিজ-দাখিল, খালসা, খালি, খাসা, খাসি, খেতাব, খেয়ালি, খেলাপ, খেসারত, খোলসা, খোলা, গজল, গড়গড়া, গর, গরিব, গলদ, গাড়া, গায়েব, তুঁতা, গোসা, গোঁৎ, ছবি, ছাদ, জওহর, জনাব, জহর, জবাব, জমজমাট, জমা, জমানা, জমায়েত, জরিপ, জরিমানা, জলদি, জলসা, জল্লাদ, জাঢরান, জালিয়াত, জাহাজ, জাহির, জিজিয়া, জিনিস, জিম্বা, জিরাত, জিরাফ, জুলুম, রেজা, জেহাদত, জৌলুস, জ্বালাতন, তওবা, তকরার, তকলিফ, তগদির, তছরূপ, তদারক, তদবির, তফশীল, তফাত, তবিয়ত, তামাদি, তরফ, তর্জমা, তর্জা, তলব, তহবিল, তাক, তাকত, তাগিদ, তাজিয়া, তাজ্জব, তানপুরা, তামাম, তামিল, তারিখ, তারিফ, তালাক, তালিকা, তালিম, তালুক, তাঁবে, তুফান, তুলকালাম, তৈয়ার, তোড়া, তোফা, তোয়াক্কা, দখল, দজ্জাল, দফা, দফা-রফা, দলিল, দাওয়াই, দাখিল, দায়রা, দালাল, দাঁও, দুনিয়া, দেনা, দোয়া, দোয়াত, দৌড়, দৌলত, নকল, নকশা, নগদ, নজর, নজির, নবাব, নসিব, নহবত, নহর, নাকাল, নাগাদা, নাজির, নায়েব, নিকাহ, নিকাশ, নিশা, নুর, নেহাত, ফকির, ফক্কড়, ফতুর, ফতে, ফতোয়া, ফরাশ, ফর্দ, ফসকা, ফসল, ফাজিল, ফানুস, ফায়দা, ফলাও, ফাঁক, ফি, ফিকির, ফুরফুর, ফুরসত, ফেরার মজুত, মঞ্জিল, মঞ্জুর, মতলব, মদদ, মণ, মনিব, মফস্বল, ময়দান, ময়না, মর্জি, মলম, মল্লিক, মশগুল, মশলা, মশাল, মসজিদ, মসনদ, মস্করা, মহকুমা, মহড়া, মহববত, মহরম, মহল্লা, মহাফেজ, মহাল, মাত, মাতববর, মাদ্রাসা, মানা, মাফ, মাফিক, মামলা, মামুলি, মারফত, মাল, মালাবার, মালিক, মালুম, মাল্লা, মাশুল, মাসহারা, মিছরি, মিনতি, মিনার, মিশর, মুনশি, মুনসেফ, মুনাফা, মুরাদ, মুরবিব, মূলতবি, মুকুল, মুল্লুক, মুশকিল, মুসলিম, মুসাফির, মুসাবিদা, মুহুরি, মেকি, মেজাজ, মেরামত, মেহনত, মোকাদ্দমা, মোকাবিলা, মোক্তার, মোতাবেকম মোতায়েন, মোন্দা, মোরববা, মোলায়েম, মোল্লা, মোসাহেব, মোক্ষম, মৌজ, মৌতাত, মৌলবি, মৌসুমী, রকম, রকম-সকম, রদ-বদল, রপ্ত, রফা, রশি, রায়ত, রায়, রিপু, রুজ, রুবাই, রেওয়াজ, রোয়াক, লক্কা, লহমা, লাখেরাজ, লায়েক, লেপ, লেফাফা, লেবু, লোকসান, শক, শয়তান, শরবত, শরাব, শরিক, শর্ত, শশলা, শহিদ, শুরু, সই, সওয়াল, সড়কি, সদও, সন, সনদ, সপ, সফর, সবুর, সলিতা, সহিস, সাকিন, সাকি, সাফ, সাবুদ, সাবেক, সালাম, সাহেবসুবা, সিকি, সিন্দুক, সুলতান, সুলুক, সেরেফ, সোটা, হক, হজম, হদ্দ, হয়রান, হরকত, হরফ, হাওদা, হাওয়া, হাওলাত, হাকিম, হাজত, হামলা, হামাম, হম্বি- তম্বি, হায়া, হারাম, হাল, হালত, তালফিল, হালুয়া, হাসিল, হিকমত, হিম্মত, হিসাব-নিকাশ, হিস্যা, হুকুম, হুকো, হুজ্জত, হুবহু, হুর, হুলিয়া, হেফাজত, হ্যাবলা।
পর্তুগিজ ভাষা থেকে আগত শব্দ : আতা, আচার, আয়া, আলপিন, আলমারি, আলকাতরা, ইস্পাত, ইস্তিরি, এনতার, কাতান, কানেস্তারা, কাবাব, কেদারা, কেরানি, কামরা, কামরা, কামিজ, ক্রুশ, গামলা, গস্ত, গরাদ, গির্জা, চাবি, জানালা, তামাক, তোয়ালে, তোল, নিলাম, পাঁউরুটি, পাচার, পেয়ারা, পিপা, পরাতম পেরেক, পাদরি, পিস্তল, ফর্মা, ফিরিঙ্গি, ফিতা, ফালতো, বারান্দা, বালতি, বোতাম, বাসন, বোমা, বেহালা, বরগা, বিন্তি, টোকা, বয়া, মার্কা, মস্করা, মিস্ত্রি, মাইরি, মাস্ত্তল, যীশু, সাগু, সাবান, সালসা।
ইংরেজি থেকে আগত শব্দ : অফিস, ইর্ট, আস্তাবল, এনামেল, এজেন্ট ইঞ্জিন, কংগ্রেস, কনস্টেবল, কফি, কমা, কারগেট, ক্যাপ্টেন, কার্নিস, কলেজ, বেকক, কেটলি, কেয়ার, গেঞ্জি, গেট, গেলাস, চেক, চেন, চেয়ার, জাঁদরেল, জেটি, জিরাফ, জেল, জ্যাকেট, টাইপ, টিকিট, টিফিন, টিন, টেবিল, টেলিফোন, টলিভিশন, টেন্ডার, টেলিগ্রাফ, ট্যাক্সি,, ট্রাম, ট্রেন, ডক, ডজন, ডবল, ডাক্তার, ডিপো, ড্রাম, ড্রেন, থিয়েটার, নম্বও, নিব, পকেট, প্যাকেট, পাউডার, পার্শেল, পালিশ, পাস, পিয়ন, পিন, পুলিশ, প্রেট্রোল, পেন, পেনসন, পেনসিল, পোস্ট অফিস, ফটো, ফুটবল, কোন ফ্রক, ফ্যাশন, ফ্ল্যাট, ফ্যাক্স, বাক্স, বুরুম, বোনাস, বোতল, মাইল মাস্টার, মিটার, মেস, ম্যানেজার, রেল, রেডিও, লেবেল, সার্কাস সার্জন, সিগন্যাল, সান্ত্রি, সেমিকোলন, সেমিজ, সিনেমা, স্টেশন, স্টিমার, শার্ট, হল, হুক, হাইকোর্ট, হাসপাতাল। ইংরেজি ভাষার মধ্যে দিয়ে বাংলায় আগত শব্দ
ওলন্দাজ থেকে আগত শব্দ : ওলন্দাজ-ইস্কাবন, ইস্ক্রুপ, তুরুপ, রুইতন, হরতন।
ফরাসি থেকে আগত শব্দ : কার্তুজ, কাফে, কুপন, রেস্তোরা, ওলন্দাজ, দিনেমার, ইংরেজ।
 জাপানি: ক্যারাটে, গেইশ, জু-জুৎ-সু, জুডো, রিক্সা, হাসনাহেনা, হারাকিরি।
হিন্দি : ইস্তক, ওয়ালা, কাহিনী, খাট্টা, খানা, চামেলি, চালু, চাহিদা টহল, ডেমরা, তাগড়া, পানি, ফালতু, বাত, বানি, লু, সাঁটা।
মালয়: কাকাতুয়া, গুদা, কিরিচ, সাগু।
জার্মানি : ফ্যুরার;
পেরু : কু ইনাইন;
অস্ট্রেলিয়া : ক্যাঙ্গারু; ইতালি: ম্যাজেন্টা;
রুশ : বলশেভিক; সিংহল : বেরিবেরি।
গ্রিক : কেন্দ্র, দাম, সুরঙ্গ।
বর্মি: লুঙ্গি, ফুঙ্গি, নাপ্পি;
চীনা: চা, চিনি, লিচু। 
গুজরাটি: তকলি, হরতাল। 
সাঁওতালি: বোঙ্গা, হাঁড়িয়া। 
তামিল: চেট্টি। 
পাঞ্জাবি: তরকা।
তিববতি: লামা;
মারাঠি : বরগি।
দক্ষিণ আফ্রিকা: জেব্রা;

1 comment:

Theme images by Jason Morrow. Powered by Blogger.